ইসরাইল

ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ৫ জুন। এ দিন ইসরাইল আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছিল। মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিমতীর, জেরুসালেম, মিসরের সিনাই ও সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে মিসর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে ইসরাইল সিনাই এলাকা মিসরের কাছে ফেরত দেয়। কিন্তু বাকি সব এলাকাতেই এখনো চলছে ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব।

ইসরাইলি বর্বরতা ও নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি কোনো পরাশক্তি সাহয্যের হাত বাড়ায়নি। এমনকি বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত জাতিসঙ্ঘও ফিলিস্তিনিদের জন্য তেমন কিছুই করেনি। অধিকন্তু বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বিশ্বস্ত মিত্র ব্রিটেনসহ পশ্চিমারা ইসরাইলকে তার সব কর্মের জন্য নিঃশর্ত সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে চলেছে। তাদেরই প্রত্যক্ষ সাহায্য-সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ইসরাইল আজ পৃথিবীর অন্যতম সামরিক শক্তির অধিকারী একটি দেশ। এই সামরিক শক্তি অর্জনে ইসরাইলের যে বাহিনী ভূমিকা পালন করছে সেই বাহিনীর নাম ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। বাহিনীটির অস্ত্র ও যুদ্ধকৌশল বিশ্বের সব দেশ থেকে ভিন্ন। সে নিষ্ঠুরতার দিক থেকে হোক আর প্রযুক্তি ও রণকৌশলই হোক।

ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী

ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) তিনটি মিলিটারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। সংস্থাগুলো হচ্ছে গ্রাউন্ড ফোর্সেস, এয়ার ফোর্স ও নেভি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র বাহিনীতে বেসামরিক লোক নিয়োগ দেয়া হলেও ইসরাইল এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী সে দেশের সামরিক ব্যক্তিত্বরা পরিচালনা করে। এই বাহিনী দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনেক বেসামরিক লোককে পদস্থ কর্মকর্তা করা হয়। অফিসিয়ালি ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৪৮ সালের ২৬ মে কেবিনেটের সিদ্ধান্তক্রমে। এ জন্য লিখিত আদেশ দেয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় বাধ্যতামূলকভাবে অনেক ইহুদিকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ছাড়াও ইহুদিদের তিনটি গোপন সংগঠন হাগানা, ইরগান ও লেহির সদস্যদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে এই বাহিনী গঠন করা হয়। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা আর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয় এই বাহিনীকে।

বিভিন্ন দেশের সাথে এই বাহিনীর অস্ত্র ও প্রযুক্তির বেশ পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ মারকাভা মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক, উজি সাব মেরিনগান এবং গালিল ও টাভর অ্যাসল্ট রাইফেল। আইডিএফ’র উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে অর্থসহযোগিতা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছেÑ এফ-১৫১ জেট বিমান, টিএইচ

ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর সংগঠন

ইএল লেজার ডিফেন্স সিস্টেম ও অ্যারো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলা সদস্যদের স্বেচ্ছায় নিয়োগ দেয়া হলেও ইসরাইলে দেয়া হয় অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে। পুরুষ সদস্যদের উৎসাহ দেয়ার জন্য তিনটি বাহিনীতেই এই নিয়োগ দেয়া হয়।


ইসরাইলের সমরশক্তি
উচ্চমানের ট্যাঙ্ক : ৯৭০
মধ্যম ও নিম্নমানের ট্যাঙ্ক : ১ হাজার ৮৩০
এপিএস, আইএফভি, এআরভি, এলসিভি : ৬ হাজার ৯৩০
সেল্ফ-প্রোপেলড আর্টিলারি : ১ হাজার ২০৪
কমব্যাট ওয়ারপ্লেন : ৮৭৫
ট্রান্সপোর্ট ওয়ারপ্লেন : ৮৪
ট্রেনিং ওয়ারপ্লেন : ১৭১
মিলিটারি হেলিকপ্টার : ২৮৬
হেভি এসএএম ব্যাটারি : ২৫
ওয়ারশিপ : ১৩
সাবমেরিন :
পেট্রল বোট : ৫০

একনজরে ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী
শাখা : আর্মি, নেভি, এয়ার
সামরিক বয়স : ১৮ বছর
অ্যাভেইল্যাবল ফর মিলিটারি সার্ভিস : পুরুষ ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৬ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৩ জন।
ফিট ফর মিলিটারি সার্ভিস : পুরুষ ১ লাখ ২২ হাজার ৯০৩ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৯২ হাজার ৩১৯ জন।
রিচিং মিলিটারি এইজ এনুয়ালি : পুরুষ ৫০ হাজার ৩৪৮ জন ও মহিলা ৪৭ হাজার ৯৯৬ জন।
অ্যাকটিভ পার্সোনেল : ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ (র‌্যাঙ্ক-৩১) জন

উদ্দেশ্য ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব

আইডিএফ’র লক্ষ্য ইসরাইলের অস্তিত্ব, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা। এ জন্য কয়েকটি বিষয়ে তারা কোনো ছাড় দেয় না। আইডিএফ কোনো ছোট যুদ্ধেও হারতে রাজি নয়। নিজ এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয় আইডিএফ। রাজনৈতিক সুযোগ থাকলে ভয় দেখিয়ে সমস্যা সমাধান করে। যুদ্ধের তীব্রতা প্রতিরোধ, দ্রুত যুদ্ধের লাভ-ক্ষতি কী হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়া। সন্ত্রাস দমনে লড়াই করা। যুদ্ধে জানমালের খুব সামান্য ক্ষতি হতে দেবে। সম্ভব হলে কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। অবশ্য এসবই কাগজের কথা। অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার দিক থেকে এই বাহিনী সারাবিশ্বে ব্যাপক সমালোচিত।

বার্ষিক ব্যয় গোপন রাখে

১৯৫০-১৯৬৬ সালে ইসরাইল দেশটির জিডিপি’র ৯ শতাংশ খরচ করেছে প্রতিরক্ষা খাতে। ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর নাটকীয়ভাবে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০ সালে প্রতিরক্ষা খাতে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ শতাংশে। কিন্তু জর্ডান ও মিসরের সাথে শান্তিচুক্তির পর এই ব্যয় আবার ৯ শতাংশে নেমে আসে এমন কথা বলা হয়ে থাকে। তবে আসল কথা হচ্ছে ইসরাইলের সামরিক ব্যয় বা এই সংস্থা সম্পর্কে নির্ভর করার মতো কোনো তথ্য কখনোই পাওয়া যায় না। যেটুকু জানা যায় তাতে ২০০৯ সালে ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর বাজেট ১ হাজার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।

নিয়মিত সার্ভিসে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক

ধর্মীয়, স্বাস্থ্যগত ও মানসিক সমস্যা ছাড়া ১৮ বছরের বেশি ইসরাইল নাগরিকদের মধ্যে ইহুদি ও দ্রুজদের মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক। পুরুষদের কমপক্ষে তিন বছর ও মহিলাদের কমপক্ষে দুই বছর মিলিটারিতে কাজ করতে হবে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিতে হবে এমন মহিলাদের ট্রেনিংয়ের জন্য তিন বছর থাকতে হয়। মহিলাদের আরো কিছু ট্রেনিং আছে যা শেষ করতে তাকে তিন বছরেরও বেশি সময় মিলিটারিতে থাকতে হয়। মহিলাদের এই সময়দানকে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বলা হলেও বিশেষ কারণেই এটি করা হয়। কোনো মহিলা মিলিটারি সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিতে চাইলেও তাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের বিষয়টি ভিন্ন।

বর্ডার পুলিশ সার্ভিসে আইডিএফ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়

ইসরাইলের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বর্ডার পুলিশ সার্ভিসের। আইডিএফ’র কিছু সদস্যকে এই সার্ভিসে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করতে হয়। সাধারণত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কমব্যাট ট্রেনিং শেষে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ হিসেবে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং নিতে হয়। এই প্রশিক্ষণের কারণ হচ্ছে যেকোনো সীমান্ত সমস্যা যেন সহজে আইডিএফ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বর্ডার পুলিশ সার্ভিস আইডিএফ’র নিয়মিত কমব্যাট ইউনিটের পাশাপাশি কাজ করে। সংস্থাটি সীমান্ত এলাকা ছাড়া জেরুসালেমসহ অন্যান্য উপশহর ও গ্রাম্য এলাকায়ও দায়িত্ব পালন করে। জরুরি মুহূর্তে বর্ডার পুলিশ সার্ভিস সরাসরি আইডিএফ’র নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।

বছরে এক মাস রিজার্ভ সার্ভিসে কাজ করতে হয়

নিয়মিত সার্ভিস ছাড়াও ৪৩ থেকে ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষদের বার্ষিক অন্তত এক মাস আইডিএফ-এ কাজ করতে হয়। এটি রিজার্ভ সার্ভিস নামে বেশি পরিচিত। সঙ্কটকালে এই সার্ভিসের সদস্যদের নিয়মিত কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৪৫ বছরের পর এই সার্ভিসে কাজ করা বাধ্যতামূলক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রিজার্ভ সার্ভিসের সদস্যদের আগের ইউনিটের অধীনেই কাজ করতে দেয়া হয়। মহিলাদেরও এই সার্ভিসে এক মাস সময় দিতে হয়।

অস্ত্রের উন্নত প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত

ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র ও কম্পিউটার পদ্ধতি ব্যবহার করে। এটি বিশ্বের সব দেশই কমবেশি অবগত। আইডিএফ’র মানব বিধ্বংসী অস্ত্র বিশ্বের যেকোনো দেশকে চ্যালেঞ্জ করার মতো। এসব অস্ত্রের কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যা তৈরি করে তা কোনো না কোনোভাবে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এম৪এ১ অ্যাসল্ট রাইফেল, এফ-১৫ ঈগল ও এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, এএইচ-৬৪ অ্যাপেচ, এএইচ-১ কোবরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ইসরাইলের অস্ত্র তৈরির নিজস্ব কারখানা রয়েছে। যেখানে অস্ত্র ও সামরিক যানের উন্নত সংস্কার করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কাভা ব্যাটল ট্যাঙ্ক সিরিজ, কেফির ফাইটার এয়ারক্রাফট। এ ছাড়া ছোট ইসরাইলের তৈরি গালিল ও টাভোর অ্যাসল্ট রাইফেলস এবং উজি সাবমেশিনগান বিশ্বের ছোট অস্ত্রের মধ্যে প্রথম সারির।

অস্ত্র তৈরির জন্য আইডিএফ’র অভ্যন্তরীণ বৃহৎ গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগ নিজ দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইসরাইলি সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে অনেক প্রযুক্তিপণ্য ক্রয় করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইএআই, আইএমআই, এলবিট, ইল-ওপি, রাফায়েল, সোলটাম। এ ছাড়াও অন্তত ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা প্রযুক্তিপণ্য ক্রয় করে।

ইসরাইলি মিলিটারি প্রযুক্তি বিখ্যাত অনেক কারণে

অনেকগুলো কারণেই ইসরাইলের মিলিটারি প্রযুক্তি বিখ্যাত। ইসরাইলের রিভলভর, বর্মাচ্ছাদিত যুদ্ধযান (ট্যাঙ্ক, ট্যাঙ্ক-কনভার্টার এপিসি, বর্মাচ্ছাদিত বুলডোজার ইত্যাদি), মানুষ্যবিহীন বায়বীয় যান ও রকেট্রি (মিসাইল ও রকেট) ইত্যাদি মারণাস্ত্র বিশ্বখ্যাত। ইসরাইল বিশ্বের একমাত্র দেশ যার রয়েছে অপারেশনাল অ্যান্টি-ব্যালাস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। এ ছাড়া ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে মধ্যম রেঞ্জের রকেট বিধ্বংসের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির লেজার সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। এর নাম দেয়া হয়েছে নটিলাস বা টিএইচইএল। মহাকাশে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসরাইলের স্বাধীন পরিদর্শন ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষমতা ইসরাইল ছাড়া রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, ভারত, জাপান ও ইউক্রেনের রয়েছে। তবে স্যাটেলাইটের উন্নয়ন ইসরাইল নিজেই করে।

পারমাণবিক বোমার অফিসিয়াল ঘোষণা নেই

ইসরাইল পারমাণবিক বোমার এখনো কোনো পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ করেনি। কতটি বোমা আছে তাও দেশটি প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির নিয়ন্ত্রণে ৭৫ থেকে ২০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে। কেউ কেউ এই সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছে। অবশ্য আইডিএফ সবসময় বলে আসছে তারা পারমাণবিক গবেষণা বন্ধ করে দিয়েছে।

ছয় দিনের যুদ্ধে দখল করে নিয়েছিল আরব বিশ্বের বিশাল ভূমি

ফিলিস্তিনের যে মানুষগুলোর বয়স এখন ৪২ তারা জন্মের পর থেকেই ইসরাইলের নির্যাতনকে মোকাবেলা করে আসছে। সে নির্যাতনে নিহত হয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। কারাগারে বছরের পর বছর ধরে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি আর বাকিরা চালিয়ে যাচ্ছে কঠিন ও অসম এক স্বাধীনতা সংগ্রাম। কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি জন্ম থেকেই উদ্বাস্তু। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ৫ জুন। এ প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে এদিন ইসরাইল আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছিল। মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিমতীর, জেরুসালেম, মিসরের সাইনাই ও সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে মিসর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে ইসরাইল সাইনাই এলাকা মিসরের কাছে ফেরত দেয়। কিন্তু বাকি সব এলাকাতেই এখনো চলছে ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব। আরো একটু পেছনের কথা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২২ সালে ফিলিস্তিন এলাকা ব্রিটিশ ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়। ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ইহুদি কমনওয়েলথ গঠনের অনুমোদন দেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন ফিলিস্তিন প্রস্তাবটি জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করে। সে বছর ৩১ আগস্ট ফিলিস্তিনবিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষ কমিটির রিপোর্টে ফিলিস্তিনকে আরব ও ইহুদি রাষ্ট্রে বিভক্তির সুপারিশ করা হয়। ২৯ নভেম্বর প্রস্তাবটি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। এতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয় একটি ইহুদি রাষ্ট্রের জন্য এবং আরবদের জন্য রাখা হয় ৪৫ শতাংশ। অথচ তখন ফিলিস্তিনে আরব ছিল ১২ লাখ ৬৯ হাজার আর ইহুদি ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার।

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট অবসানের তারিখ ঘোষিত হয় এবং এর একদিন আগেই ইসরাইল তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট স্টালিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান তৎক্ষণাৎ ইসরাইলকে স্বীকৃত দেয়। এভাবেই জন্ম হয় ইসরাইল রাষ্ট্রের।

বিভক্তির পরপরই শুরু হয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। ১৯৪৮ সালের জুলাইয়ের ১০ দিনের ওই যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে আরব বাহিনী পরাজিত হয়। অক্টোবরে ইসরাইল চূড়ান্ত হামলা চালায় উত্তর লেবাননের সীমান্ত ও গোলান মালভূমি এবং দক্ষিণ আকাবা উপসাগর ও সাইনাই উপত্যকায়। এতে ফিলিস্তিনের ৭০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড ইসরাইরের দখলে চলে যায়। পরে ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে ইসরাইল আবারো আরব দেশ আক্রমণ করে তার সীমানাকে বিস্তৃত করে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের অব্যাহত দখলদারিত্ব, সীমাহীন নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতা চলে আসছে। আর এই বর্বরতা চলছে যে বাহিনীর মাধ্যমে সেই বাহিনীই হচ্ছে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।

শেষ কথা

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ  বলেছেন, ইসরাইল অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন থেকে ধারণা, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের অপরাজেয় শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধে হামাস এবং আরো আগে হিজবুল্লাহ প্রমাণ করেছে ইসরাইলও পরাজয় বরণ করবে। শুধু তাই নয়, যে ইসরাইল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিজেকে মনে করত অপ্রতিরোধ্য শক্তি সে ইসরাইল এখন নিজেই পতনের সম্ভাবনায় ভীত। ইসরাইলের উচিত বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ফিলিস্তিন থেকে এখনই সেনা প্রত্যাহার করা। উচিত আগ্রাসন ও দখলদারিত্ব বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতা দেয়া। সারা বিশ্বেই সমরশক্তি সমস্যা সমাধানে ধীরে ধীরে ব্যর্থ হচ্ছে।

Don't Miss A Single Updates

Remember to check your email account to confirm your subscription.

Blogger
Disqus
Post a comment ➜

No Comment